মামদানি আসল উগান্ডায় না জন্মে ডামি উগান্ডায় জন্মালে; তার নাম কিছুতেই জোহরান মামদানি হতো না। কারণ ও নামে অ্যাসথেটিকস নেই। তার নাম হতো জয়রণ মহা দান্তে। পত্রিকার কলামিস্ট বাবা ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা সাংস্কৃতিক নেত্রী মায়ের ছেলে হিসেবে জয়রণ বেড়ে উঠত সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে। নিউইয়র্কে যে কর্মজীবী বাংলাদেশী আন্টি ও আফ্রিকান আংকেলদের সঙ্গে জোহরানের সমাজ; সেই সমাজের অপরায়ন শেখানো হতো মহাদান্তেকে। সে তার বাসার লিফটের সামনে সাইনবোর্ড দেখত, এখানে বুয়া, ড্রাইভার ও মালিদের ওঠা নিষেধ।
তার বাসায় মাঝে মাঝে নক্সী পাঞ্জাবি পরা বুদ্ধিজীবীরা আসতেন। তারা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আলোচনা করতেন; কেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে পথ হারাবে না বাংলাদেশ। ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মিজান চাচা হঠাত খেঁকিয়ে উঠতেন; ঢাকা ইউনিভার্সিটিটা মাদ্রাসা হয়ে গেছে। জয়রণকে উত্তর দক্ষিণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। পরে কর্নেলিয়া ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করলেই হবে।
মায়ের বান্ধবীরা আসতেন নারী উন্নয়নের আলাপ করতে। ব্যারিস্টার মইনুল টকশো তে কীভাবে একজন নারী সাংবাদিককে হ্যারাস করেছেন; এর প্রতিবাদে প্রেসক্লাবে সেমিনার হবে; সেই পরিকল্পনার ফাঁকে ফাঁকে আলাপ হতো কী করে মানিক মিয়ার ছেলে ব্যারিস্টার মইনুল ইসলামপন্থী হয়ে গেলেন আর ভাটি গ্রামের নারী সাংবাদিক সেকুলার ফেমিনিস্ট হয়ে উঠলেন। এ কথা সে কথা দে তো মা আলাপাতা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আমরা ন্যায়বিচার পাচ্ছি এই অনুসিদ্ধান্তে নকশী সানকিতে বেগুন ভাজা আর ভুনা খিঁচুড়ি খেয়ে শেষ হতো ফেমিনিজম নাইট।
ভাল লাগতেসে না বোড় লাগতেসে বলে গিটার হাতে উস্কো খুস্কো চুল নিয়ে ড় ড় করতে করতে দুটি বন্ধু বাসায় এসে পৌঁছাতো। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন বসন্তে তারা নতুন এলিট হয়ে উঠেছে। ফলে তারা জয়রণকে তালিম দিত কে গাঁইয়া কে ক্ষ্যাত কে ছাপড়ি সে বিষয়ে। জয়েন্ট পাকিয়ে বন্ধুরা গান ধরত, উই শ্যাল ওভারকাম সামডে।
ফাইন আর্টসের এক তরুণী অথৈ উর্বশীর সঙ্গে একটু প্রেম প্রেম ভাব হলে; সে ফেসবুকে এসে জয়রণ-র পক্ষে ঝগড়া শুরু করত। বিএনপি ও জামায়াতের লোকেদের অসুর বানিয়ে পেইন্টিং করে ফেসবুকে ছেড়ে তির্যক মন্তব্য পেয়ে জয়রণকে লাগিয়ে দিত তার পক্ষে ফেসবুক ওকালতি করার জন্য। উর্বশী কল্পনায় নিজেকে গ্রেটা থুনবার্গ মনে করে; ফ্লোটিলা এঁকে ফেসবুকে দেয়।
মিলিট্যান্সি ইন বাংলাদেশ এন ওভারভিউ গ্রন্থ লিখে জয়রণ-র বাবা পেয়ে যেতেন একুশে পদক। আর মা নারী অধিকারের পক্ষে পরীক্ষিত নেত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর জয়িতা পুরস্কার পেয়ে যেতেন। পুরস্কার দেবার সময় প্রধানমন্ত্রী ফুসলাতেন, তোমার বিজ্ঞাপনী সংস্থা থেকে আমরা এবার ইলেকশন ক্যাম্পেইন ভিডিও বানাতে চাই। একটাই অনুরোধ তোমাকেও ভোট চাইতে হবে।
এইভাবে জুলাই এসে পড়লে বাবা প্রথম আলোতে কলাম লিখতেন, প্রধানমন্ত্রী কথা বলুন বাচ্চাদের সঙ্গে; কথা বললে সব মেঘ কেটে যাবে। মা একবার প্রোপিক কালো আরেকবার লাল আরেকবার কালো আরেকবার লাল করে অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে লিখতেন, আর দেখতে পারি না এসব।
জয়রণ কিছুদিন আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে লেটস টক করেছে; কিন্তু এখন হাওয়া মন্দ। ফাইন আর্টসের বান্ধবীর ডাকে সে টিএসসিতে হাজির হয়। সুর করে মুক্তিরও মন্দিরও সোপান তলে গায়। ৫ অগাস্টে বিজয় উৎসবে যোগ দেয়।
কিন্তু সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় ফেসবুকে জয়রণ ও তার বন্ধুবান্ধবীদের জয়েন্ট কোলাবরেশনে ডাকাত ডাকাত রবে চিৎকার। চারদিকে এত দাড়ি-টুপি কেন, বিপ্লব বেহাত হয়েছে। ইউনুস দায়িত্ব নিলে তারপর ইউনুস কি ভুল করিয়াছিল নিয়ে বিষণ্ণ ও দ্রোহী রাতের সংলাপ। মন্তব্যে কেউ জিজ্ঞেস করে, ভাই কি আগেই ভালো ছিলাম পার্টি! তখন চট করে টিএসসিতে মুক্তিরও মন্দিরও গাওয়ার ছবি ছুঁড়ে দিয়ে চ্যালেঞ্জ জানায়, আপনার কি আছে এমন একখানি ছবি।
হঠাৎই বাবা শুক্রবারে পাড়ার মসজিদে যেতে শুরু করেন। অথচ আগে বলতেন, আমাদের শুক্রবারটা হাতছাড়া হয়ে গেছে। সেমিনারে অংশ নেন, সে নো টু ইসলামোফোবিয়া। তবে প্রথম আলোর কলামে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথা বলেন পেলব করে।
মা তার বন্ধুবৃত্ত বদলে বিএনপির আন্টিদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেন। এইভাবে জয়রণ মহা দান্তের জন্য একটা নির্বাচনী টিকেটের জন্য দেন দরবার শুরু করেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না হলেও মেয়র ইলেকশনে একটা ব্যবস্থা করা যাবে সে দায়িত্ব নেন এক ধানের শীষ আন্টি। জয়রণ মহা দান্তে তখন জুলাই বিপ্লবী হিসেবে বিএনপির পার্টি অফিসে ঘোরা ফেরা শুরু করে।
চিত্রকর উর্বশী নিয়মিত ফেসবুকে এটা ওটা এঁকে ট্রলের ফাঁদে পড়লে; জয়রণকে তখন প্রেমিকার পোস্টে টহল দিতে হয়। এরমাঝে জোহরান মামদানি নিউইয়র্কের মেয়র হলে প্রেমিকা ডামি থুনবার্গ তাকে ফোন করে বলে, চলো বিয়ে করে ফেলি; তুমিও তো মেয়র জোহরান মামদানি হবে আর আমি হবো রামা দুয়াজি।



পাঠকের মন্তব্য